বিচারপতির কড়া বার্তা – Voter Deletion প্রক্রিয়া হতে হবে Fair ও Transparent
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছে, যা সরাসরি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং ভোটাধিকার রক্ষার সঙ্গে জড়িত। Election Commission of India (ECI)-কে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন Bihar Special Intensive Revision (SIR) প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাদ পড়া ৬৫ লাখ ভোটারের নামের তালিকা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে, প্রতিটি নাম বাদ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে হবে। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, ভোটারের নাম মুছে ফেলার প্রক্রিয়া শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং এটি একটি ব্যক্তির মৌলিক ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সমান। তাই এটি হতে হবে সম্পূর্ণ ন্যায়সংগত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। আদালতের বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি সুর্য কান্ত এবং জয়মাল্য বাগচি, যারা আবেদনকারীদের যুক্তি ও ECI-এর প্রতিরক্ষা উভয়ই শুনেছেন। আবেদনকারীরা দাবি করেছেন, বর্তমান SIR প্রক্রিয়ায় যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই, ফলে ইচ্ছেমতো নাম বাদ দেওয়া সম্ভব, যা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন-এর নীতির পরিপন্থী। অন্যদিকে, ECI জানিয়েছে, আইনত তারা এই ধরনের রিভিশন চালানোর ক্ষমতা রাখে এবং দীর্ঘদিন ধরে ভোটার তালিকার বড়সড় সংস্কার হয়নি বলে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
Bihar SIR প্রক্রিয়া ও বিতর্কের সূচনা

এই বিতর্কের সূচনা হয় ২৪ জুন, যখন Election Commission ঘোষণা করে যে তারা বিহারে Special Intensive Revision (SIR) প্রক্রিয়া চালু করবে। তাদের যুক্তি ছিল, প্রায় ২০ বছর ধরে ভোটার তালিকার গভীর রিভিশন হয়নি, অথচ এই সময়ের মধ্যে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন, শহরমুখী অভিবাসন এবং পুরনো তালিকায় অসঙ্গতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই আসন্ন Bihar Assembly Election 2025-এর আগে তালিকাটি হালনাগাদ করা অত্যন্ত জরুরি। তবে আবেদনকারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই প্রক্রিয়া যথাযথ নজরদারি ছাড়া পরিচালিত হলে বহু যোগ্য ভোটার অন্যায়ভাবে বাদ পড়তে পারেন। এর ফলে একটি বড় অংশ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, যা সরাসরি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধী নেতারা, মানবাধিকার সংস্থা People’s Union for Civil Liberties, নারীবিষয়ক সংগঠন National Federation for Indian Women, এবং গণতন্ত্র ও স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থার পক্ষে কাজ করা Association for Democratic Reforms (ADR)। তারা দাবি করেছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে পাবলিক ট্রান্সপারেন্সি অত্যাবশ্যক, নতুবা এটি রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহারের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
ডকুমেন্ট যাচাই ও সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে—কোন কোন নথি ভোটারের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে। ১০ জুলাই, সুপ্রিম কোর্ট ECI-কে পরামর্শ দেয়, যেন Aadhaar Card, Ration Card, EPIC (Voter ID)—সবগুলোই গ্রহণযোগ্য হিসেবে ধরা হয়। তবে পরে ECI তাদের হলফনামায় জানায়, Aadhaar এবং Ration Card ভোটার যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে চূড়ান্তভাবে ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এগুলো নাগরিকত্বের অবিসংবাদিত প্রমাণ নয়। আবেদনকারীরা এই অবস্থানকে অযৌক্তিক ও অবাস্তব বলে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আদালতও মৌখিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলেছে, ECI সঠিকভাবেই উল্লেখ করেছে যে Aadhaar নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, তবে ভোটার অন্তর্ভুক্তির জন্য একাধিক নথি গ্রহণ করা হলে তা ভোটার-বান্ধব হবে। আদালত স্পষ্ট করেছে, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি বা বর্জন সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে ECI-এর এখতিয়ারভুক্ত, কিন্তু সেই ক্ষমতার প্রয়োগ হতে হবে ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছভাবে। এই মন্তব্য প্রমাণ করে যে, সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তবে একইসঙ্গে ভোটারদের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে চাইছে।
৬৫ লাখ বাদ দেওয়া ভোটারের তালিকা প্রকাশের দাবি

১ আগস্ট, ADR আদালতে একটি ইন্টারিম অ্যাপ্লিকেশন দাখিল করে, যাতে তারা দাবি জানায় যে ৬৫ লাখ বাদ পড়া ভোটারের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং প্রতিটি বাদ দেওয়ার স্পষ্ট কারণ জানাতে হবে। ECI এই দাবির জবাবে জানায়, আলাদা করে বাদ পড়া ভোটারের তালিকা প্রকাশের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কোনো নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে নোটিশ দেওয়া হবে, তাকে শুনানির সুযোগ দেওয়া হবে এবং যুক্তিসহ লিখিত আদেশ দেওয়া হবে। আদালত এই প্রতিশ্রুতি গুরুত্ব সহকারে নিলেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য তালিকা প্রকাশের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এর ফলে বিষয়টি এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে একদিকে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক ক্ষমতা ও আইনি ব্যাখ্যা, আর অন্যদিকে রয়েছে ভোটারদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি। আদালতের চূড়ান্ত নির্দেশে বলা হয়েছে, এই তালিকা প্রকাশ হলে সাধারণ মানুষ নিজের নাম যাচাই করতে পারবে, এবং অন্যায়ভাবে বাদ পড়লে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে। ফলে এই সিদ্ধান্ত আসন্ন Bihar Assembly Election 2025-এর রাজনৈতিক সমীকরণেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
উপসংহার
“ভারতের সুপ্রিম কোর্ট Election Commission of India-কে নির্দেশ দিয়েছে Bihar Special Intensive Revision (SIR) প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ৬৫ লাখ ভোটারের তালিকা প্রকাশ করতে এবং প্রতিটি বাদ দেওয়ার কারণ জানাতে। আদালত জানিয়েছে, ভোটারের নাম মুছে ফেলার প্রক্রিয়া হতে হবে ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছ, যাতে কোনো নাগরিক অন্যায়ভাবে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত না হন।”