ন্যাশনাল গার্ডের নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটন ডিসি: ট্রাম্পের ‘ক্রিমিনাল এমার্জেন্সি’ ঘোষণা

প্রস্তাবনা

ওয়াশিংটন ডিসি-তে এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজধানীতে ‘ক্রিমিনাল এমার্জেন্সি’ ঘোষণা করে ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করেছেন। এর ফলে ফেডারেল সরকার সরাসরি ডিসি পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এই পদক্ষেপ ৩০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে, তবে কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষে এটি বাড়ানো সম্ভব। ঘটনাটি শুধু রাজধানী নয়, পুরো মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

কেন ঘোষণা করা হলো ‘ক্রিমিনাল এমার্জেন্সি’

হোয়াইট হাউসের সূত্র অনুযায়ী, সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসি-তে অপরাধের হার হঠাৎ বেড়ে গেছে এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, কিছু গ্রুপ রাজধানীতে সংগঠিত অপরাধমূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন:

> “আমাদের রাজধানী নিরাপদ নয়, এবং এটি মেনে নেওয়া যাবে না। আমেরিকান নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া আমার প্রথম দায়িত্ব।”

৮০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের মোতায়েন

শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাঠানো হয়েছে, যেমন—

ক্যাপিটল হিল এলাকা

হোয়াইট হাউসের চারপাশ

প্রধান সরকারি ভবন ও স্মৃতিস্তম্ভ

অপরাধপ্রবণ এলাকা

ন্যাশনাল গার্ডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মার্ক হেন্ডারসন বলেন:

> “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, জনগণকে নিরাপদ রাখা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা।”

ডিসি পুলিশের ফেডারেল নিয়ন্ত্রণ

সাধারণত ডিসি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় মেয়র ও সিটি কাউন্সিলের হাতে থাকে। তবে ‘হোম রুল অ্যাক্ট’ অনুযায়ী জরুরি পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন।এই নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য কার্যকর হয়, কিন্তু কংগ্রেসের সম্মতিতে সময়সীমা বাড়ানো যায়।

বর্তমানে পুরো ডিসি পুলিশ বাহিনী ফেডারেল কমান্ডের অধীনে চলে গেছে, যা স্থানীয় সরকারের ক্ষমতাকে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ডেমোক্র্যাট নেতারা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলছেন, এটি রাজধানীতে “ফেডারেল ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার”।ডিসি মেয়র মুরিয়েল বাউসার বলেন:

> “আমাদের শহরের নিরাপত্তা আমরা নিজেরাই রক্ষা করতে সক্ষম। এই সিদ্ধান্ত আমাদের স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষুণ্ণ করছে।”

অন্যদিকে, রিপাবলিকান নেতারা প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপকে “প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী” বলে সমর্থন জানিয়েছেন।

সাধারণ মানুষের মতামত

রাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। কেউ মনে করছেন ন্যাশনাল গার্ডের উপস্থিতি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করছে, আবার কেউ উদ্বিগ্ন যে এটি “মিলিটারাইজড পুলিশিং”-এর দিকে ঠেলে দিতে পারে। এক বাসিন্দা জানান:

> “হ্যাঁ, রাতে রাস্তায় বের হওয়া আগের চেয়ে নিরাপদ মনে হচ্ছে, কিন্তু এত সৈন্য দেখতে ভালো লাগছে না।”

দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব

ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ফলে শহরের দৈনন্দিন জীবন বদলে গেছে:

কিছু রাস্তা আংশিকভাবে বন্ধ

সরকারি ভবনে প্রবেশে কড়া চেক

বড় সমাবেশ ও বিক্ষোভের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ

কিছু এলাকায় রাতের কারফিউ

ইতিহাসের প্রেক্ষাপট

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রাজধানীতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর নজির রয়েছে:

১৯৬৮ সালে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যার পর দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হামলার পর।

তবে অপরাধ বৃদ্ধির অজুহাতে ডিসি পুলিশকে সরাসরি ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নেওয়া বিরল ঘটনা।

আগামী দিনের সম্ভাবনা

যদি অপরাধ কমে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তাহলে ৩০ দিনের মেয়াদ শেষে নিয়ন্ত্রণ ফেরত যাবে স্থানীয় সরকারের হাতে।তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—যদি কংগ্রেস রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রণে থাকে, সময়সীমা বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল।

উপসংহার

ওয়াশিংটন ডিসি-তে ন্যাশনাল গার্ডের এই নজিরবিহীন মোতায়েন আমেরিকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক পরিবেশে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে কেউ দেখছেন জরুরি প্রয়োজন হিসেবে, আবার কেউ বলছেন এটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ। আগামী কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা নির্ভর করবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক চাপের ভারসাম্যের উপর।

Share:

WhatsApp
Telegram
Facebook
Twitter
LinkedIn