বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২০% এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০% নবায়নযোগ্য উৎস থেকে সরবরাহ করা হবে। এটি শুধু জ্বালানি নিরাপত্তাই নিশ্চিত করবে না, বরং কার্বন নির্গমন কমিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখবে।
বর্তমান নবায়নযোগ্য শক্তির অবস্থা

বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ১,৫৫৯ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান উৎসগুলো হলো –
সৌর শক্তি: ১,২৬৫ মেগাওয়াট
জলবিদ্যুৎ: ২৩০ মেগাওয়াট
বায়ু শক্তি: ৬৩ মেগাওয়াট
সৌর শক্তি এখনো সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে। গ্রিড-সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে গ্রামীণ অঞ্চলে সোলার হোম সিস্টেম—সবই এ সাফল্যের অংশ। জলবিদ্যুৎ মূলত পার্বত্য অঞ্চলে এবং বায়ু শক্তি কক্সবাজার ও কুয়াকাটার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে সীমিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সরকারের নীতি ও কৌশল
বাংলাদেশ সরকার নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে –
1. নবায়নযোগ্য শক্তি নীতি ২০০৮ – যা ২০২৩ সালে হালনাগাদ হয়েছে, এবং বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে।
2. ফিড-ইন ট্যারিফ ব্যবস্থা – নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের জন্য নির্দিষ্ট ক্রয়মূল্য নিশ্চিত করা।
3. কর রেয়াত ও শুল্ক ছাড় – সৌর প্যানেল ও অন্যান্য সরঞ্জামের ওপর শুল্ক কমানো।
4. নেট মিটারিং নীতি – বাসা বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সৌর সিস্টেম স্থাপন করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে বিক্রির সুযোগ।
বিনিয়োগ ও আর্থিক সহায়তা
নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে –
২০৩০ সালের লক্ষ্য অর্জনে ১০-১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ দরকার।
আন্তর্জাতিক অনুদান ও জলবায়ু তহবিল (Green Climate Fund, ADB, World Bank) থেকে আর্থিক সহায়তা অপরিহার্য।
বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) মডেলের প্রসার দরকার।
নবায়নযোগ্য শক্তি খাতের সম্ভাবনা

বাংলাদেশ ভৌগোলিক ও আবহাওয়াগত কারণে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে উপযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ –
সৌর শক্তি: গড়ে প্রতিদিন ৪-৫ কিলোওয়াট-ঘন্টা/মি² সূর্যালোক পাওয়া যায়।
বায়ু শক্তি: উপকূলীয় অঞ্চলে গড় বায়ু গতিবেগ ৫-৭ মি/সেকেন্ড, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে উপযুক্ত।
জলবিদ্যুৎ: পাহাড়ি নদী ও জলাশয়ের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যেতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
যদিও সম্ভাবনা অনেক, তারপরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে
উচ্চ প্রাথমিক বিনিয়োগ ব্যয়
প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব
গ্রিড অবকাঠামো দুর্বলতা
নীতি বাস্তবায়নে বিলম্ব
এসব সমস্যা সমাধানে –
গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ
প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
বেসরকারি খাতের জন্য আর্থিক প্রণোদনা
গ্রিড আধুনিকায়ন ও সংযোগ সম্প্রসারণ
উপসংহার
বাংলাদেশ যদি সঠিক নীতি, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহায়তা পায়, তবে নবায়নযোগ্য শক্তি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। “নবায়নযোগ্য শক্তি বাংলাদেশ” এবং “বাংলাদেশ রিনিউএবল এনার্জি” কেবল একটি স্লোগান নয়—এটি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।