রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে অপরাধ জগত—এই পথচলায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) নেতা বিভাস অধিকারী। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের নোয়েডা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে একটি ‘নকল পুলিশ স্টেশন’ চালানোর অভিযোগে। তবে এখানেই শেষ নয়—তদন্তে উঠে এসেছে, কলকাতাতেও তিনি একই ধরনের জালিয়াতি সংগঠন চালাতেন।
নোয়েডার ঘটনায় গ্রেফতার
নোয়েডা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বিভাস অধিকারী এমন একটি স্থানীয় অফিস তৈরি করেছিলেন যা দেখতে আসল পুলিশ স্টেশনের মতো।
সেখানে পুলিশ ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন কর্মীও ছিল।
সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভিযোগপত্র নেওয়া হতো এবং ‘মামলা ম্যানেজ’ করার নামে অর্থ লেনদেন করা হতো।
অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কাগজপত্র ও ভুয়া আইডি ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার জানান, “এটি সাধারণ জালিয়াতি নয়, বরং জনসাধারণের আস্থা ভেঙে দেওয়ার মতো একটি অপরাধ।”
কলকাতায় আগের কার্যকলাপ
তদন্তে জানা গেছে, বিভাস অধিকারী পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়ও একই ধরনের ‘নকল থানা’ চালাতেন।
স্থানীয় মানুষ ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করতেন।
সরকারি প্রভাব খাটিয়ে সমস্যার সমাধান করানোর প্রতিশ্রুতি দিতেন।
টাকার বিনিময়ে ‘আইনি সুবিধা’ পাইয়ে দেওয়ার দাবি করতেন।
শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ
বিভাস অধিকারীর নাম আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ছিল। অভিযোগ রয়েছে,
তিনি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ নিতেন।
একাধিক প্রার্থী তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এই মামলায় CBI এবং ED-এর তদন্ত চলমান।
রাজনৈতিক পটভূমি
বিভাস অধিকারী একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় নেতা ছিলেন।
স্থানীয় পর্যায়ে তাঁর প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য।
রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল বানিয়ে একাধিক অবৈধ কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।
পরে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
আইনি পদক্ষেপ ও পরবর্তী তদন্ত
বর্তমানে নোয়েডা পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা, ছদ্মবেশ ধারণ, ও সরকারি প্রতীক অপব্যবহারের ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করেছে।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,
তাঁর নেটওয়ার্কে আরও কয়েকজন যুক্ত থাকতে পারে।
কলকাতা ও নোয়েডা দুই জায়গায়ই সম্পূর্ণ তদন্ত হবে।
আর্থিক লেনদেন ও সম্পত্তি যাচাই শুরু হয়েছে।
সমাজে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
একাংশ বলছে, রাজনীতির ছত্রছায়ায় এমন অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।